সবারই মুড সুইং হয়

mood-swing
Image Credit- Pixabay

বাংলা ছোট গল্প

আমার প্রেমিকা আমাকে প্রায়ই বলতো তার নাকি খুব মুড সুইং হয়। ফলে তার সব কাছের বন্ধু বান্ধবী তাকে ছেড়ে দূরে চলে গেছে। আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলতো তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।
 
এই মুড সুইং শব্দটা এদিক ওদিক অনেক বার শুনলেও এর অর্থ ঠিকঠাক আমিও জানতাম না। তবুও মেয়েটাকে সান্তনা দিতাম 'চিন্তা করো না এভাবেই সারাটাজীবন আমি তোমার সাথে থাকবো।'
 
বেশ এমন ভাবেই আমাদের সম্পর্কটা ভালোই হাসিখুশি ভাবে চলছিল, অনেক বার ঝগড়া হত ঠিকিই কিন্তু দিনশেষে আবার একসাথে হাসতাম,মন ভরে কথা বলতাম,দুজন দুজনের রাগ ভাঙ্গাতাম। 
 
কিছুদিন পর দেখলাম মেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ আমার সাথে রুড বিহেভ করছে। আমার নরমাল কথাতেও মেয়েটা ওভার রিঅ্যাক্ট করছে। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছে কোনো কথা শুনছে না। কোথাও যেন সব কিছুর উপর বিরক্তবোধ দেখাচ্ছে মেয়েটা।
 
একদিন জিজ্ঞেস করলাম কিছু হয়েছে তোমার?
মেয়েটা "কিছু না" বলে এড়িয়ে গেল আমার কথা।
 
এমন ভাবে বেশ কিছু দিন চলতে চলতে হঠাৎ আমাদের মধ্যে খুব কথাকাটাকাটি শুরু হয়। ফোনের মধ্যে দুজনেই দুজনের খারাপ দিকটা তুলে ধরতে লাগলাম। অভিযোগের পাহাড় টা ক্রমশ উঁচু হতে লাগলো। এবং কিছুক্ষণ পর মেয়েটা হুট করেই কলটা কেটে দিল।তা দেখে তখন আমার মেজাজটা আরো গরম হয়ে গেল তাই ফোনটা সুইচ অফ করে দিলাম। প্রায় তিন ঘন্টা পর যখন সুইচ অন করলাম সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার কল এলো। কাঁদো কাঁদো গলায় সরি বলে ক্ষমাও চাইলো। তবে আমি তাকে কোনো রেসপন্স করলাম না। চুপ করে রইলাম।
 
মেয়েটা আবার বলল রাগ করো না প্লিজ সরিইই!
আমি ভেবেছিলাম আমাদের মধ্যে হয়তো এরপর শুধু কথা কাটাকাটিই হবে ভালোবাসাটা হয়তো নেই আর। 
 
তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসার,তাহলে দুজনেই হয়তো ভালো থাকবো। কল কাটার আগে রাগি গলায় মেয়েটাকে বলেই দিলাম তুমি আর আমাকে কল বা মেসেজ করবে না।
 
তবুও মেয়েটা নির্লজ্জের মতো বারবার কল করতো আর আমি সমানে মেয়েটাকে ইগনোর করতাম কারন যখন একসাথে ছিলাম দুজনের কেউই ভালো ছিলাম না, বারবার ওর কল দেখে একদিন রেগে মেয়েটাকে ব্লক করেই দিলাম।
 
আজ আমি ২০ বছর ছুই ছুই বয়সে এসে যখন চারপাশটা একটু ভালো করে লক্ষ্য করলাম, দেখলাম চারপাশটা পুরো অন্ধকারাচ্ছন্ন। দিনের সূর্যের আলো হয়তো এই প্রকৃতিকে আলোকিত করেছে। কিন্তু আমি আমার চারপাশে শুধু অন্ধকার দেখছি।
 
এর কারন একটাই মুড সুইং। ঠিক ৮ মাস ২৩ দিন আগে একটা মেয়ে আমাকে বলেছিল তার মুড সুইং হয়, আর এখন আমি নিজেই এই রোগে আক্রান্ত ।
 
কিছুদিন আগে যে বন্ধুটার সাথে হেসে কথা বলছিলাম তাকেই রাগের মাথায় যাতা বলে দেওয়ায় সেও চলে গেল।
 
বাড়িতে মাঝে মাঝে বাবা মায়ের সামান্য কথাতেই চেঁচিয়ে উঠি। কিছুতে মন বসতো না সবেতেই কেমন বিরক্তবোধ হতো। তাই আর বাড়ির বাইরে যেতে ইচ্ছে করতো না, বাড়ির অন্ধকার রুমে একা একা বসে সময় কাটাতাম। এখন খুব করে মেয়েটাকে চাই কিন্তু আমি যে নিজেই তার আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। 
 
এখন ভাবি ওই মেয়েটার কথা যে মেয়েটা আমায় বারবার বলেছিল মুড সুইং এর কথা আর আমি তাকে মিথ্যা সান্তনা দিয়েছিলাম আমিও তার পরিস্থিতি না বুঝে তাকে একা ফেলে চলে আসলাম। মেয়েটা হয়তো ভেবেছিল তখন যদি আমরা আর একটুক্ষন কলে থাকি তাহলে হয়তো আমরা দুজন দুজনকে ঘৃনা করতে লাগবো তাই কল কেটে ট্রপিকটাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি বোকার মতো রাগ করে মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম। এখন ভাবি আমি যদি আগে থেকে মুড সুইং সমন্ধে বুঝতাম তাহলে মেয়েটাকে কখনো ছেড়ে আসতাম না। সহ্য করতাম। অপেক্ষা করতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। করলে হয়তো
মেয়েটাও একটু শান্তি পেত।
 
মুড সুইং এর ব্যাপারটা আমি অনেক পরে জেনেছি।
সবাই বলতো হরমোনাল ইমব্যালেন্স, মেন্সট্রুয়াল সাইকেল সহ বিভিন্ন কারণে বেশিরভাগ মেয়ে মুড সুইং এ ভুগে। হঠাৎ হঠাৎ তাদের বিহেব পাল্টে যায়। ওভার রিঅ্যাক্ট করে।
কিন্তু আমি উপলব্ধি করেছি প্রত্যেক মানুষের মুড সুইং হয়। হুম হয়তো আমরা তাকে সাইকো বলি। কিন্তু ওই মানুষটা আসলে সাইকো না। আবেগ, মায়া মমতায় ভরা একটা মানুষ।
 
ওই মানুষগুলো বড্ড অসহায় হয়,
ওরা না হতে পারে কারো একজন ভালো বন্ধু,
না হতে পারে একজন ভালো স্টুডেন্ট,
না হতে পারে বাবা মায়ের ভালো সন্তান,
না হতে পারে একজন ভালো প্রেমিক প্রেমিকা।
তাই কথায় আছে,
" রাগি ছেলে মেয়েদের সঙ্গে একটু মানিয়ে গুছিয়ে থাকুন
দেখবেন ওরা প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসবে আপনাকে।"
 
 
~প্রিয় 
 
#bangla_choto_golpo

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box.

নবীনতর পূর্বতন