বং-প্রেম 
কলমে- শুভদীপ পতি
                          Picture- Collected


আচ্ছা বাঙালির কাছে "প্রেম" জিনিসটার টার defination টা ঠিক কি??

প্রথম প্রেম টা তো দুগ্গা পূজা, যেটা শুরু হয়ে যায় মা বিসর্জনের পরের দিন থেকে। পুজো এলেই বাঙালির প্রেম পায়, আর সেই প্রেমের সঙ্গিনী পাওয়ার লোভে জিম থেকে সেলুন থেকে পার্লার লম্বা লাইন । সে যতই জিন্স টপ এর দিন আসুক, পুজো মানেই শাড়ির কাছে পাঞ্জাবির অসহায় আত্মসমর্পণ, পুজো মানেই বাঙালির হাজার টা আবেগ! পাশের পাড়ার মামনিদের নিয়ে কল্পনা তে হোক কিংবা ধোঁয়া ওঠা চায়ের দোকানের আড্ডা তে হোক, এই আবেগ টা ই বাঙালিকে "বাঙালি" তে পরিণত করে! 


অষ্টমী তে অঞ্জলি দেওয়ার ফাঁকে কারোর চোখের ঘুম চুরি করার কিংবা কারোর চোখের কাজলে ঘায়েল হওয়ার লম্বা কাহিনী, কারোর কল্পনায় লিখেফেলা আস্ত এক আরব্য রজনী!--- এটা বাঙালির প্রেমেই সম্ভব দাদা।

আমাদের প্রেম unique। আজও আমরা কারোর আসার অপেক্ষায় অহেতুক বেলা বোস কে 2441139 এ ফোন করে যাই। আর যখন দেখি কোন কিছুতেই কিছু কাজ হচ্ছে না, তখন ঠাঁই নি আমাদের প্রাণের ঠাকুর রবি ঠাকুরে। কবি শুধু চলে যাওয়ার গানই লিখেননি ফিরে আসার সুরও দিয়ে গেছিলেন। কিন্তু হাজার প্রেমের কবিতার ভিড়ে বাঙালির ভরসা "শেষের কবিতা" । 

বৃষ্টি আর প্রেম বাঙালির কাছে নতুন কিছু নয়। বৃষ্টি পড়লে আমরা কবি হয়ে যাই, আর প্রেমে পিছলে গেলে তো আর কথাই নেই, জয় গোস্বামী দেরও পিছনে ফেলে দি। 

বাঙালির প্রেম মানে ফুচকা, ১ টা ফ্রি এর জন্য কাকুতি মিনতি। রসগোল্লার আবিষ্কার নিয়ে ঝগড়া। ফোকারা প্লটের ফেলুদা হলেও 1st day 1st show দেখার জন্য লম্বা লাইন, টাকলু লালমোহন এর প্রতি অনাবিল স্নেহ, টেনিদার ঠাট্টা ই খিল্লির সম্বল।

বাঙালির প্রেম মানে এখনো চিংড়ি আর ইলিশের লড়াই। বাঙালি আজও পুজো প্রেমে মজে, আড্ডা গল্প ভোজে। বাঙালির প্রেম এখনো দুপুরে খাওয়ার পর ভুঁড়িতে হাত দিতে দিতে পাশবালিশ নিয়ে ঘুমের মধ্যে লুকিয়ে থাকে, বাঙালি মানেই ঘুম থেকে উঠে চা এর জন্য ছটপটানি।

আর বাঙালির সত্যিকারের প্রেম one nd only  " আন্টি সেপ্টিক ক্রীম বোরোলিন" আর পুজো আসছে মানেই আদি মোহিনী মোহন কানজিলাল ,শ্রীনিকেতন কিংবা শালিমারের সেই বিজ্ঞাপনে মজে থাকা। 

 বাঙালিরদের সবচেয়ে বড় প্রেম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে সেটা "সবজান্তা" মনোভাব। আমরা সবজান্তা! সর্বজ্ঞানী! সে ফুটবল হোক বা চন্দ্রযান বাঙালি কিন্তু ওস্তাদ দাদা।

"চাঁদ কেন আসে না আমার ঘরে" র চাঁদ কেন আসে নি সেটা তারা নাই বা জানতে পারে, কিন্তু চন্দ্রযান ঠিক কেন চাঁদে ঠিক ভাবে ল্যান্ডিং করতে পারেনি সেটা কিন্তু প্রতিটা বাঙালি জানে, কারণ একটাই " এগিয়ে থেকে, এগিয়ে রাখে " আর ভগবান ছাড়া কারও তাবেদারী করে না " -র সৌজন্যে।

লোকে বলে বাঙালিরা অন্ধ প্রেম-ভালোবাসার প্রতি, আমি বলি মন্দ কি তাতে, হোক না বাঙালিরা অন্ধ, সেটা তো ভালোবেসেই অন্ধ! হোক না শান্তি মাছে-ভাতে। হাজারটা কাজের ভিড়ে চায়ের ঠেকের একটুখানি আড্ডা যদি এই বাঙালিকে না পাওয়া কষ্টগুলো ভুলিয়ে রাখে দোষ কি তাতে! পুজো প্রেমের কয়েকটা দিন যদি মামনিদের মিষ্টি হাসি,চোখের কাজল জীবনের প্রথম বিরহ থেকে দিন কয়েকের মুক্তি দেয় সেটা তো ভালোই। অনেক অভাব থাকুক তাও আদরের "দুগ্গি" এলে বাবার বোনাসের টাকায় পাওয়া একটা দামি শার্ট, মায়ের হাতের তৈরি পোলাও,চিকেন কষা যদি দুঃখ ভোলায় ,ভোলাক না! 

আমি এই বাঙালি প্রেম এই মজে আছি। মজে থাকতেও চাই আমার সারাটা জীবন।।।

"আমি বাঙালি বলে আজো গেয়ে যাই আমি পারব পেরোতে,দেখাব বিশ্বকে আমি অবাক এক বাঙালি প্রণয়ী"।

Post a Comment

Please do not enter any spam link in the comment box.

নবীনতর পূর্বতন